মৌসুমী বায়ুর বিধ্বংসী খামখেয়ালের শিকার আজ কেরালা;দারুণ বন্যা-পরিস্থিতি আছড়ে পড়েছে কেরালার বুকে।নিরন্তর ঝড়বৃষ্টিতে মালাবার উপকূল-ঘেঁষা এই ছোট্ট ভূখণ্ডটির জনজীবন আজ সাংঘাতিকভাবে বিপর্যস্ত।
গত ৩ সপ্তাহ ধরে বন্যার ভয়াবহতা এমন হারে বেড়ে চলেছে যে কর্তৃপক্ষ আসন্ন বিপর্যয় আটকাতে ৩০ টিরও বেশী জলাধার খুলে দিয়েছে।প্রায় ৪০টির ও বেশী নদীর অপ্রতিরোধ্য জলস্রোত প্লাবিত করেছে কেরালার শহর,রাস্তাঘাট,নদী-সংলগ্ন বসতিগুলোকে।কমবেশি ১০ হাজার মানুষ এখনো পর্যন্ত গৃহহারা,আপাতত তারা ত্রাণশিবিরে। কৃষিজ ও প্রাণীজ সম্পদের ওপর নেমে এসেছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।বহু মানুষকে সামান্যতম সুবিধাটুকু দিয়ে বাসস্থান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে।তার চেয়েও বেশী মানুষের কাছে এখনো পর্যন্ত ত্রাণ নিয়ে পৌছনো সম্ভব হয়নি।,তার মধ্যে বহু আদিবাসী এলাকাও রয়েছে।

কেরালার ১৪ টি জেলাই এখন ভীষণভাবে বিপর্যস্ত,গত আটচল্লিশ ঘন্টায় মৃত্যুর সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে।এক লাখেরও বেশী মানুষকে বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে সরানো হয়েছে। Waynd,Idukki,Aluva,Pathanamthitta-এর মত প্রচুর এলাকায় বন্যা আর ধসের দাপটে বিপর্যয় এক বড়সড় চেহারা নিয়েছে।এখানকার অনেক আদিবাসী জনজীবন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।স্থানীয় ও রাজ্যস্তরে বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা করা হয়েছে, নিরাপদ সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন অসরকারি সংস্থাও এগিয়ে আসতে শুরু করেছে।নদী-সন্নিহিত এলাকাগুলো থেকে মানুষজনকে উড়ালপথে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।আপৎকালীন যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন নম্বর চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু দিনদিন প্রয়োজনীয় চাহিদার মাত্রা বেড়েই চলেছে,আরও অনেক বেশী আর্থিক সাহায্য, খাবার ও উদ্ধারকারী দল এই মুহূর্তে কেরালায় প্রয়োজন।একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান হল সবাই একসাথে পাশে এসে দাঁড়ানো এবং সাহায্যের হাত বাড়ানো।

ভয়ংকরভাবে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনতে আরও ত্রাণশিবির খোলা হচ্ছে।কিন্তু এই শিবিরগুলো পর্যাপ্ত আর্থিক সাহায্যের অভাবে সম্পূর্ণ সক্রিয়তার সাথে কাজ করতে পারছে না।সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভয়াবহতার নিরিখে নজির সৃষ্টিকারী এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আরও অনেক বেশী সাহায্যের প্রয়োজন।

উন্নত চিৎিকসা পরিষেবার জন্য পৃথিবীখ্যাত এই রাজ্যের বহু হাসপাতাল এখন বন্যাকবলিত। ফলত সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা বহু রোগী বঞ্চিত হচ্ছে জরুরি চিকিৎসা থেকে। প্রায় প্রতিটা স্কুল-কলেজ ও এধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ত্রাণশিবিরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বিশেষ ধরণের পরিষেবা ও চাহিদাসামগ্রী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বহু বয়স্ক মানুষ।

কেরালা বরাবরই ভারতের অন্যান্য স্থানে প্রাকৃতিক বা যুদ্ধ বিপর্যয়ের সময়কালে দুর্গতদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।ভূমিকম্পকবলিত গ্রামে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া থেকে শুরু করে যে কোন ধরণের বিপর্যয়ের মোকাবিলায় কেরালার মানুষের অকুন্ঠ সহযোগিতার মত নজির আর কোনো রাজ্যের নেই।কিন্তু এসবের প্রতিদানে এত গুরুতর একটা পরিস্থিতিতে কেরালা প্রয়োজনের তুলনায় খুব সামান্যই সাহায্য পাচ্ছে।এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সংবাদমাধ্যমের উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো।বন্যার ভয়াবহতার খবর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে তারা যে ভূমিকা পালন করেছে, তা নগণ্যই বলা চলে।কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও খুব একটা সদর্থক নয়, তারা এখনও এই বিপর্যয়ের ভয়াবহতাকে সেরকমভাবে গুরুত্ব দেয়নি ও বড়ো ধরণের আর্থিক সাহায্য ও উদ্ধারকারী দল পাঠাবার ব্যবস্থা করেনি।

আমরা সমস্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মাধ্যমকে আবেদন জানাই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য এবং সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এর ভয়াবহতার কথা ছড়িয়ে দেবার জন্য।
‘মানুষ হেরে যাবার জন্য সৃষ্ট হয়না।’ কেরালা এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রাণপন লড়াই চালাচ্ছে।এখানকার মানুষ, রাজ্য প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ও ধর্মীয় সংস্থা সবাই একসাথে লড়ে যাচ্ছে।কিন্তু তা করেও এই ভয়াল পরিস্থিতিকে দমন করা সম্ভব হচ্ছে না, কেরালার আরও অর্থবল প্রয়োজন।আরও অনেক বেশি খাদ্যসামগ্রী ও স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন।এখনো পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দশহাজার কোটি টাকা এবং উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলেছে।কেরালার পুননির্মাণ একটা অসম্ভব কাজ হতে চলেছে।

আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে আবেদন করি এই বিপর্যয়কে একটা কেন্দ্রীয় বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করতে এবং দেশ-বিদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে সমস্ত মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।এই মুহূর্তে প্রতিটা পয়সা, প্রতিটা সাহায্যের আশ্বাস, প্রতিটা সহানুভূতিই গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা এমন একটা অবস্থার দিকে এগোচ্ছি যেখানে উদ্ধারকাজ ও পুননির্মাণ একসাথে হওয়াটা জরুরি।

Sethulekshmy C
Translated from English by Bedadyuti Jha
coordinated by  Arathi P M

Comments

comments